‘এন্ডোজেনাস নিউরাল স্টেম সেল’ এক্টিভেশন থেরাপি

আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে স্টেম সেল থেরাপি সম্পর্কে শুনে আসছি। এ সম্পর্কে যেমন অনেক মিথ চালু আছে আবার আছে চটকদার বিজ্ঞাপন ও। তাই আজকে আমরা এই স্টেম সেল নিয়ে আলোচনা করব এবং বিশেষ শিশু দের ক্ষেত্রে আমরা যে ধরণের ব্যয়বহুল স্টেম সেল থেরাপির কথা শুনে আসছি তার কার্জকারিতা ও করনীয় সম্পর্কেও আলোচনা করব। অনুরোধ থাকবে একেবারে নিচ পর্জন্ত পড়ার।

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে স্টেম সেল কি? সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে স্টেম সেল হচ্ছে সেই ধরণের দেহ কোষ যা যে কোন অন্য দেহ কোষের আকার, আকৃতি বা কার্জক্রম ধারণ করতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের শরিরেই এ ধরণের স্টেম সেল রয়েছে এবং এই স্টেম সেল গুলো আমাদের বিভিন্ন অঙ্গের মৃত বা অকার্জকর কোষের জায়গায় এসে তাকে প্রতিস্থাপন করে এবং এভাবে আমাদের সুস্থতা ও জীবনী শক্তি সুরক্ষিত হয়। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই স্টেম সেল এর সংখ্যা ও প্রবাহ কমতে থাকে বিধায় আমরা বার্ধক্যে উপনীত হই।

এখন আসা জাক, স্টেম সেল থেরাপি কি? যখন মনে করা হয়, শরিরের নিজস্ব স্টেম সেল গুল আর কোন ক্ষত পুরণ করতে পারছে না, বা কোন অঙ্গ আঘাতের পরেও রি-জেনারেট হচ্ছে না, তখন বাহিরে থেকে স্টেম সেল শরীরের রক্ত নালীতে অথবা নির্দিস্ট অঙ্গে সরাসরি ইঞ্জেক্ট করে দেয়া হওয়। যেমন বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এক প্রকার স্টেম সেল থেরাপি। তবে, সরাসরি এভাবে স্টেম সেল শরীরে ঢুকানোর কিছু মারাত্মক বিপদ আছে। অনেক সময় অন্য মানুষ অথবা ডোনারের শরিরের স্টেম সেল ব্যবহার করলে গ্রহিতার শরির তা রিজেক্ট করে এবং মারাত্মক ইমিউন রেস্পন্স এর কারণে এমন কি জীবন সংশয় ও ঘটতে পারে। এই জন্য খুবি উচ্চ মাত্রায় ইমিউনো-সাপ্রেসর বা শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রায় বন্ধ করে রাখে এমন ঔষধ দিয়ে রাখা হওয়, ফলে অনেক সময় সামান্য কোন অসুখ ও শরির আর সহ্য করতে পারে না। এই সমস্যা রোধের জন্য, যিনি গ্রোহিতা, তার শরির থেকেই স্টেম সেল নিয়ে ল্যাবে তার সংখ্যা বাড়িরে আবার গ্রহিতার শরীরে ফেরত দেয়া হওয়। কিন্তু, এতেও অনেক সময় নির্দিস্ট কোষে রুপান্তর হতে সক্ষম স্টেম সেল খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় স্টেম সেল ল্যাব থেকে শরীরে ঢুকানোর পর টিউমারে রূপ নিতে পারে।

এন্ডোজেনাস স্টেম সেল তাহলে কি? এটা খুবি আশ্চর্জের বিষয় যে, আমাদের প্রত্যকের মস্তিষ্কের মধ্যেই নিউরাল স্টেম সেল রয়েছে যাকে এন্ডোজেনাস নিউরাল স্টেম সেল বলে। আমাদের ব্রেইন এর স্টেম সেল গুল হিপ্পোক্যাম্পাল রিজিওন ও সাব-ভেন্ট্রিকুলার জোনে থাকে এবং প্রয়োজনে নিউরাল রিপেয়ার ও রিজেনারেশনে অংশ নেয়।

বিশেষ শিশু দের জন্য স্টেম সেল থেরাপি  আদতে ব্যপক ব্যয় বহুল ও ব্যপক বিজ্ঞাপিত অথচ এখনো প্রমাণিত নয় এমন একটি পধ্যতি। আমরা শুনতে পাই পার্শবর্তি দেশে প্রায় ১৫-২০ লক্ষ্য টাকা ব্যয় হয় স্টেম সেল থেরাপি নিতে। এখন পর্জন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি যে, রক্তনালীর মাধ্যমে দেয়া ল্যাবে তৈরি নিউরাল স্টেম সেল ‘ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার’ (রক্ত নালী ও ব্রেইন এর মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা) ভেদ করতে পারে। তবে, খুবি উন্নত দেশে সরাসরি ব্রেইন এর সমস্যা আক্রান্ত স্থানে ইঞ্জেক্ট করে স্টেম সেল দেয়ার মাধ্যমে কিছুটা ফলাফলের প্রমান পাওয়া যায়, কিন্তু ইঞ্জেক্ট করা স্টেম সেল গুলো থেকে তৈরি ফাংশনাল নিউরাল সেল গুলোর মধ্যে মাত্র ২% থেকে ৮% বেঁচে থাকে (সুত্রঃ ক্লিক করুন )।

যেখানে সরাসরি ব্রেইনে ইঞ্জেক্ট করেই স্টেম সেলের ২-৮% বাঁচে, সেখানে শরীরের রক্ত নালীর মধ্যে দেয়া স্টেম সেলের কিছুই মস্তিষ্কে পৌঁছে কিনা তা নিয়ে ব্যপক সমালোচনা আছে, কারণ, আমাদের ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার খুবি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা যা আমাদের বাইরের আক্রমণ থেকে ব্রেইন কে বাঁচিয়ে রাখে।

তাহলে আমাদের করণীয় কি? একটি প্রবাদ আছে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদুর। আপনার বাচ্চা টি যদি সেই পরিবারের হয় যাদের অর্থ নিয়ে কোন সমস্যা নেই, তারা চেস্টা করে দেখতে পারে, তবে তার আগে বলব, নিজে ভাল করে দেখে নিন। বিজ্ঞাপনে উৎসাহিত হয়ে নয়, রিসার্চ গুল পড়ে নিন। অনেক সময় ফরমায়েশি রিসার্চ জার্নালের আর্টিকেল বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়, সেগুলো খেয়াল রাখবেন।

মূল আলোচনাঃ সেই যে প্রথমে বলেছি, আমাদের বাচ্চাদের, আমাদের সকলের মস্তিষ্কেই  এন্ডোজেনাস স্টেম সেল রয়েছে। তাহলে নিজেদের মস্তিস্কের ভেতরে থাকা সেই স্টেম সেল ব্যবহার করে কি আমাদের বাচ্চাদের নিউরাল রিপেয়ার তরান্বিত করা যায় না? অবশ্যই যায়। এখন পর্জন্ত মোট তিনটি পধ্যতি প্রমাণিত ভাবে এন্ডোজেনাস স্টেম সেল এক্টিভেশনের মাধ্যমে ব্রেইন রিজেনারেশন ঘটাতে পারে। এগুলো হল, বিশেষ ধরণের ইন্টেন্সিভ ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ, অত্যন্ত সূক্ষ্ম মাত্রার টাইম ভ্যারিয়েন্ট ম্যাগনেটিক ফিল্ড (জনসন স্পেস সেন্টার, নাসা এর রিসার্চ, Physiological and Molecular Genetic Effects of Time-Varying Electromagnetic Fields on Human Neuronal Cells) এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম মাত্রার ইলেক্ট্রন স্টিমুলেশন (যাকে আমরা নিউরো মড্যুলেশন বলি, লিংকঃ ক্লিক)।

অর্থাৎ, রক্তনালীর মাধ্যমে প্রদত্ত, ব্যপক ব্যয় বহুল ও হাই রিস্ক স্টেম সেল থেরাপির বদলে ‘এন্ডোজেনাস নিউরাল স্টেম সেল’ এক্টিভেশন থেরাপি অর্থাৎ, নিজেদের ব্রেইনের ভেতরে থাকা স্টেম সেল গুলোকেই উপরের প্রমাণিত তিনটি পধ্যতির মাধ্যমে উজ্জিবিত করে নিউরাল রিপেয়ার’ই হতে পারে বিশেষ শিশু দের জন্য নিরাপদ, স্বল্প ব্যয়ের কার্জকরি থেরাপি ব্যবস্থা।

অনেকেই জেনে খুশি হবেন যে, এই পধ্যতি গুল ২০১৫ সাল থেকেই বাংলাদেশে ‘আই এন ডি আর’ এ আছে এবং বর্তমানে শুধু দেশের’ই নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাচ্চারাও এই থেরাপি গুল নিতে বাংলাদেশে আসছেন, কারণ উন্নত বিশ্বেও এগুলো ব্যপক ব্যয়বহুল এবং বাংলাদেশেই পৃথিবীর সবচেয়ে কম খরচে এই থেরাপি গুলো পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে, বাইরে থেকে রক্ত নালীর মাধ্যমেই হোক, অথবা নিজেদের ব্রেনের স্টেম সেল কে স্টিমুলেট করেই হোক, নিউরাল রিপেয়ার/রিজেনারেশন যাই বলি না কেন, ব্রেইন কে শিখানোর যে থেরাপি গুল, যেমন অকুপেশনাল থেরাপি, সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন, ফিজিওথেরাপি, ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং, বিহেভিয়ার মডিফিকেশন ইত্যাদির মধ্যে বাচ্চাকে থাকতে হবেই, অন্যথায়, ব্রেইন এর সক্ষমতা বাড়ানোর এত চেস্টা বিফলেই যাবে। তবে উন্নত প্রযুক্তি গুল ব্যবহারে পাশাপাশি অন্যান্য থেরাপি নিতে থাকলে শেখার হার বেড়ে যায় অনেক গুনে।

ইন্সটিটিউট অব নিউরো-ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ (আই এন ডি আর) এ এই সেবা চালু হয়েছে। আপনার বাচ্চার জন্য এই সেবা গ্রহণ করতে চাইলে আপনি ‘আই এন ডি আর’ এ যোগাযোগ করতে পারেনঃ +8801931405986