অটিজম ডায়াগনোসিস সাধারণত ছোট বেলায় (৪ বছরের) মধ্যে হয়ে থাকে। যদিও আমাদের দেশে এখনো শতকরা কত বাচ্চা অটিজম এ আক্রান্ত তা বের করা যায়নি, তার পরেও অনেক আধুনিক দেশের গবেষণা দেখে ধারনা করা যায় তা নেহায়েত কম নয়। আমাদের দেশে ব্যাপক প্রচার প্রচারনার কারনে সমাজে এখন অনেকেই সচেতন অটিজম সম্পর্কে। যার কারনে হয়ত এখন অনেক বেশি বাচ্চার অটিজম আছে বলে সনাক্ত হচ্ছে, পূর্বে যা হাবাগোবা অথবা অতি দুষ্টু বলে চালিয়ে দেয়া হত। অনেক সময় পাগল বলা হত।
তবে আপনারা জেনে আশ্চর্যান্বিত হবেন, আমাদের দেশে তো বটেই, অনেক উন্নত দেশেও যেসকল অটিস্টিক বাচ্চা বড় হয়ে গ্যাছে, তারা একপ্রকারে সমাজের চিন্তার আড়ালেই চলে গ্যাছে। অনেকের হয়ত মাথাতেই থাকেনা এই বাচ্চারা একসময় বড় হয়ে যাবে।
প্রাপ্তবয়স্ক দের অটিজম সংক্রান্ত গবেষণাঃ
সারা পৃথিবীতেই অটিজমে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক দের নিয়ে গবেষণা কম, International Journal of Geriatric Psychiatry এর ২০১২ সালের একটি রিপোর্ট এ দেখা যাচ্ছে, এ পর্যন্ত বাচ্চাদের অটিজম নিয়ে ১২,০০০ এর ও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক দের বিষয়ে রয়েছে মাত্র হাজার চারেক। অর্থাৎ, গবেষণা ক্ষেত্রেও গবেষক গন অটিজমএ আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক দের নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহি হচ্ছেন না।
অটিস্টিক প্রাপ্তবয়স্ক দের কাজ বা ব্যাস্ত থাকার সুযোগের অভাবঃ
আমাদের দেশে সাধারন প্রাপ্তবয়স্ক দেরই চাকরির অভাব। সেখানে অটিস্টিক বা বিশেষ শিশুদের চাকরি একটি দুরহ ব্যাপার। তবে বিশেষ সার্ভিস চালু করার মাদ্ধমে সরকার এই ধরনের বিশেষ প্রাপ্তবয়স্ক দের জন্য বৃত্তিমূলক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ করে দিলে তা হবে একটি অসম্ভব ভাল কাজ।
চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবার অভাবঃ
অটিস্টিক বাচ্চা যেভাবে আজকাল বিভিন্ন স্কুল অথবা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প পরিসরে হলেও সেবা পেয়ে থাকে, প্রাপ্তবয়স্ক অটিস্টিক গন সে সকল সেবা থেকে একপ্রকার বঞ্চিতই বলা যায়। এর জন্য আমরা যারা এই সেক্টর এ আছি তাদের সকলকেই চিন্তা ভাবনা করতে হবে। এখন থেকে উদ্যোগ না নিলে সেই দিন দূরে নেই যখন বিপুল পরিমান অটিস্টিক বাচ্চা যারা আর হয়ত ৫-১০ বছরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাবে, তারা পরিবার ও সমাজের চিন্তার কারন হয়ে দেখা দিবে। কারন, এখন হয়ত তারা স্কুলে যায়, পরে কি করবে? এখন হয়ত বাবা মা তাকে ম্যানেজ করতে পারেন, পরে কি হবে?
প্রয়োজন একটি উন্মুক্ত ও খোলা মনের সমাজঃ
প্রাপ্তবয়স্ক অটিস্টিক দের সমাজে ভাল ভাবে সামাজিক জীবন যাপন এর জন্য প্রয়োজন একটি উন্মুক্ত ও খোলা মনের সমাজ, যেখানে ব্যাবধান থাকা স্বত্বেও সকল কে দেখা হবে সমান ভাবে, সমান অধিকার সম্পন্ন মানুষ হিসাবে। এটা একদিনে হবে না। তবে আমাদের দেশে যে গতিতে বিশেষ শিশুদের নিয়ে সামাজিক প্রচারণা চলছে, তা যদি আরও বেগবান করা যায়, এবং কোন কারনেই যদি থেমে না যায়, তাহলে হয়ত আগামি দশকে আমরা এ ধরনের একটি সমাজ পেতে পারি, যার জন্য আমাদের সকলকেই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।
১২ ই জুন ২০১৪, ওসমান, পোষ্ট গ্রাড, নিউরো রিহ্যাব (ইউ কে), প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরো-ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ট্রাস্ট। ০১৯৩১৪০৫৯৮৬