অটিজম চিকিৎসায় উটের দুধ

পৃথিবীতে একমাত্র মানুষই প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পরও দুধ খায়। আবার মানুষই একমাত্র প্রাণী যে নিজের মায়ের দুধ ছাড়া অন্য প্রাণীর দুধ পুষ্টি লাভের আশায় খেয়ে থাকে। আমরা সবচেয়ে বেশি যে প্রাণীর দুধ খেয়ে থাকি তা হল গরুর দুধ। এতদিনে বিশেষ শিশুদের বাবা-মা গণ হয়ত জেনেছেন যে, গরুর দুধে ‘কেসিন’ নামক একপ্রকার পেপটাইড থাকে যা মানুষের বাচ্চা হজম করতে পারে না, কারণ বাছুরের অন্ত্রে এই পেপটাইড কে পরিপাক করার মত এঞ্জাইম থাকলেও মানব শিশুর অন্ত্রে তা থাকে অনুপস্থিত। এমন কি, মানবশিশুর অন্ত্রের ইনফ্লামেসন (প্রদাহ) এর কারনে যদি কোন ভাবে এই পেপটাইড রক্তে চলে আসে তাহলে এটা মস্তিস্কের ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার ভেদ করে হেরোইন/মরফিন এর মতই প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাচ্চার মস্তিস্কের বিকাশ কে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

তবে সবচেয়ে বিপদের কথা হচ্ছে গরু, ছাগল ইত্যাদির দুধে যে বেটা-ল্যাক্টোগ্লোবিউলিন নামের উপাদান থাকে তা ‘ইমিউন-হাইপার অ্যাক্টিভিটি’ এর প্রধান কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে গাঁট প্রবলেম (অন্ত্রের প্রদাহ) এবং ‘ইমিউন-হাইপার অ্যাক্টিভিটি’ অটিজম এবং হাইপার অ্যাক্টিভ ডিজঅর্ডার এর সাথে অনেক ক্ষেত্রেই ওতপ্রোত ভাবে সম্পর্কিত।

এখন আসাজাক মূল আলোচনায়। উটের দুধ হাজার বছর ধরেই পৃথিবীর মরু প্রবন এলাকায় যেখানে উটের প্রচলন বেশি সেসব এলাকায় বাচ্চাদের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এর মধ্যে বাচ্চার হজমের সমস্যা, এলারজি, বিকাশগত সমস্যা ইত্যাদি প্রধান।

ডঃ এ আল্টিং ও অন্যান্য (নেদারল্যান্ড ইন্সিটিউট অব ডেইরি রিসার্চ) এবং ডঃ এম জি স্মিথ (নেদারল্যান্ড গেল্ডার্স ভ্যালি হসপিটাল) গণের গবেষণায় দেখা যায়, উটের দুধে উচ্চ মাত্রায় ল্যাক্টোফেরিন, ইম্যুনোগ্লোবিউলিন, লাইসোজোম এবং ল্যাক্টোপারঅক্সাইড রয়েছে যার কারনে প্রাচিন কাল থেকেই উটের দুধ অন্ত্রের ও পরিপাক তন্ত্রেরে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। সেইসাথে উটের দুধে মানব শরীরের ইনসুলিন এর মতই কাজ করতে সক্ষম এক ধরনের প্রোটিন রয়েছে যা ডায়াবেটিস এর জন্য অত্যন্ত উপকারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মানব দুগ্ধের মত উটের দুধেও বেটা-ল্যাক্টোগ্লোবিউলিন থাকে না, তাই অন্য প্রাণীর দুধ খাবার ফলে ‘ইমিউন-হাইপার অ্যাক্টিভিটি’ হবার যে সম্ভাবনা থাকে, উটের দুধ খেলে সেই সম্ভাবনা থাকে না।

ইজরায়েল এর ডঃ আল আয়াধি লাইলা এবং ডঃ নাদরা ইলিয়াস ইলামিন তাদের এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ এর মাধ্যমে প্রমান করেছেন যে উটের দুধ খাবার মাধ্যমে অটিজম এ আক্রান্ত বাচ্চাদের শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস উল্লেখযোগ্য হারে কমানো যায় এবং অটিজম রেটিং স্কেল এ তাদের অটিজম সংক্রান্ত আচরন এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে এবং অটিজম এর মাত্রা কমে আসে। ( http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3773435/#B30 )

যাদের বাচ্চা অটিজম এ আক্রান্ত, তারা বাচ্চাকে গরুর দুধ এর বদলে উটের দুধ খাইয়ে দেখতে পারেন তাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে কিনা। উটের দুধ সহজলভ্য না হলেও বিরল নয়। বিদেশ থেকে ফ্রোজেন উটের দুধ আনতে হলে লিটার প্রতি ২-৩ হাজার টাকা পড়তে পারে। তবে দেশে সাধারনত উটের ফার্ম গুল ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকে।

For help:  autismbd24@gmail.com  or, 01931405986

পৃথিবী ব্যপি অটিজম ও হাইপার অ্যাক্টিভ বাচ্চাদের বাবা-মা দের উটের দুধ ব্যবহার ও তার ফলাফল নিয়ে আলোচনা দেখতে পাবেন নিচের ফেসবুক গ্রুপ এ https://www.facebook.com/groups/225663314116369/