সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত বাচ্চা কি কথা বলতে দেরি করে?

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) একটি শারীরিক অবস্থার নাম, যা মস্তিষ্কের বিকাশজনিত ত্রুটি বা আঘাতের ফলে ঘটে। এটি শিশুদের শারীরিক নড়াচড়া, পেশির সমন্বয় এবং মাঝে মাঝে মানসিক বিকাশে সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে প্রশ্ন থাকে: সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত বাচ্চারা কি কথা বলতে দেরি করে? এর উত্তর হলো, অনেক ক্ষেত্রেই হ্যাঁ।

এই প্রবন্ধে আমরা সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের ভাষাগত বিকাশের চ্যালেঞ্জ, দেরির কারণ এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

 

সেরিব্রাল পালসি ও ভাষাগত বিকাশের সম্পর্ক

সেরিব্রাল পালসি শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে না, এটি মস্তিষ্কের স্নায়বিক কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলে। ফলে শিশুর কথা বলা, ভাষা বোঝা বা সঠিকভাবে প্রকাশ করার দক্ষতা ব্যাহত হতে পারে। এই অবস্থায় শিশুরা বিভিন্ন মাত্রায় কথা বলার জটিলতায় ভুগতে পারে।

 

কেন সেরিব্রাল পালসি শিশুরা কথা বলতে দেরি করে?

১. মস্তিষ্কের ক্ষতি:

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের যেসব অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা পেশি নিয়ন্ত্রণ এবং বক্তৃতা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ফলে শিশুর মুখ, জিহ্বা এবং গলার পেশিগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

 

২. পেশির সমন্বয়ের অভাব:

 

কথা বলার জন্য জিহ্বা, ঠোঁট এবং মুখের পেশিগুলির সমন্বয় দরকার। সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুরা এই পেশিগুলি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

৩. শ্রবণ বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: 

অনেক সময় সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি তাদের ভাষা শেখা এবং ব্যবহার করায় বাধা সৃষ্টি করে।

৪. বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সমস্যা:

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ মানসিক বিকাশে সমস্যার শিকার হতে পারে, যা তাদের ভাষা শেখার গতিকে প্রভাবিত করে।

 

সেরিব্রাল পালসি শিশুর কথা বলার লক্ষণসমূহ যা কথা বলায় দেরির ইঙ্গিত দেয়

  • দ্রুত শব্দ না শেখা: সাধারণত শিশুরা ১২-১৮ মাস বয়সের মধ্যে প্রথম শব্দ শেখে। তবে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এটি অনেক দেরিতে হতে পারে।
  • শব্দ উচ্চারণে সমস্যা: মুখের পেশির সমন্বয় ঠিকমতো না হওয়ায় তাদের শব্দ উচ্চারণে অস্পষ্টতা থাকতে পারে।
  • অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার: কথা বলতে না পারার কারণে তারা অঙ্গভঙ্গি বা ইশারার মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।
  • বাক্য গঠনে জটিলতা: দীর্ঘ বাক্য গঠন করতে বা সঠিক বাক্য গঠন করতে অসুবিধা হয়।
  • শব্দ ভাণ্ডার কম: ভাষাগত দক্ষতার অভাবে তাদের শব্দ ভাণ্ডার অন্যান্য শিশুর তুলনায় সীমিত থাকে।

 

কিভাবে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর কথা বলায় দেরি চিহ্নিত করবেন?

১. বয়স অনুযায়ী ভাষাগত মাইলফলক মূল্যায়ন:


শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের সময়সূচি অনুযায়ী ভাষাগত মাইলফলক থাকে। উদাহরণস্বরূপ, এক বছরের মধ্যে শিশুরা সাধারণত ‘মা’ বা ‘বাবা’ বলতে শেখে। যদি এই সময়ে শিশুর ভাষাগত বিকাশ না ঘটে, তবে এটি দেরির ইঙ্গিত হতে পারে।

২. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ:


বাচ্চার ভাষা শেখার প্রক্রিয়া এবং কথা বলায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুতই একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

 

কথা বলার দেরি কাটানোর উপায়

কথা বলার দেরি কাটানোর উপায়

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর কথা বলার দক্ষতা উন্নত করার জন্য সঠিক থেরাপি এবং ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. স্পিচ থেরাপি:

স্পিচ থেরাপি সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর ভাষাগত বিকাশে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। এটি মুখ, জিহ্বা এবং গলার পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

২. অকুপেশনাল থেরাপি:

এই থেরাপি শিশুর দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে তাদের ভাষাগত বিকাশেও সহায়ক।

৩. চিহ্ন ভাষা (Sign Language):

যেসব শিশু কথা বলতে পারে না বা দেরি করে, তাদের জন্য চিহ্ন ভাষা শেখানো যেতে পারে। এটি যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম হতে পারে।

৪. টেকনোলজির ব্যবহার:

আজকাল বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ ডিভাইস এবং অ্যাপ্লিকেশন সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের ভাষাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।

৫. শ্রবণশক্তি পরীক্ষা:

শিশুর কথা বলার দেরি শ্রবণশক্তির সমস্যার কারণে হতে পারে। তাই শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করানো উচিত।

 

পিতামাতার ভূমিকা

পিতামাতার ভূমিকা

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর ভাষাগত বিকাশে পিতামাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

  • শিশুর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলুন।
  • ধৈর্য ধরুন এবং শিশুকে উৎসাহিত করুন।
  • কথা বলার সময় শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিন।
  • পছন্দের খেলনা বা চিত্রের সাহায্যে ভাষা শেখানোর চেষ্টা করুন।

 

সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের কথা বলার দেরি একটি চ্যালেঞ্জ হলেও সঠিক চিকিৎসা, থেরাপি এবং পিতামাতার সহযোগিতায় এটি অনেকাংশে উন্নত করা সম্ভব। ভাষাগত বিকাশে দেরি কাটানোর জন্য যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

উপসংহার

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ভাষাগত বিকাশে দেরি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এটি তাদের জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সমর্থনের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব। পিতামাতা ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা শিশুদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

Institute of Neuro Development & Research(INDR) এর দক্ষ এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ সফলতার সাথে সেরিব্রাল পালসি ও অটিজম আক্রান্ত শিশুর সকল সেবা ও থেরাপি করে আসছে।  যোগাযোগ : 01931405986 অথবা ভিজিট করুনঃ https://www.autismbd.com

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top