বাচ্চাদের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার একটি জটিল স্নায়ুবিক সমস্যা, যা তাদের শারীরিক চলাচলের স্বাভাবিকতা ব্যাহত করে। এই অবস্থাটি তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এবং জীবনের মান কমিয়ে দেয়। এর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে এই বিষয়টি আলোচনা করব।
মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার কি?
মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার হলো এক ধরনের স্নায়ুবিক সমস্যা, যেখানে বাচ্চার শরীরের পেশীর নড়াচড়া অনিয়ন্ত্রিত, অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত হতে পারে। এটি মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের কার্যকারিতায় সমস্যা বা ক্ষতির কারণে হয়। এই সমস্যাটি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে এবং এর প্রভাব বাচ্চার শারীরিক এবং মানসিক উন্নয়নের উপর পড়ে।
মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের প্রধান ধরন
১. ডিস্টোনিয়া (Dystonia):
- পেশীর অস্বাভাবিক সংকোচন, যা শরীরকে বাঁকা বা অস্বাভাবিক অবস্থানে রাখে।
২. কোরিয়া (Chorea):
- আকস্মিক এবং অনিয়মিত নড়াচড়া যা হাত, পা বা মুখে দেখা যায়।
- ধীর এবং মোচড়ানো ধরণের নড়াচড়া।
৪. টিক ডিসঅর্ডার (Tic Disorder):
- বারবার এবং অনিয়মিত একই ধরনের চলাফেরা বা শব্দ তৈরি করা।
৫. পারকিনসোনিজম (Parkinsonism):
- ধীর গতির নড়াচড়া, পেশীর কাঠিন্য এবং কম্পন।
৬. মায়োক্লোনাস (Myoclonus):
- পেশীর হঠাৎ আকস্মিক সংকোচন।
মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের কারণ
১. স্নায়ুবিক বিকাশের জটিলতা: মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা এ সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ।
২. জেনেটিক কারণ: বংশগতভাবে স্নায়ুবিক সমস্যাগুলি বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যেতে পারে।
৩. মস্তিষ্কে আঘাত বা ক্ষতি: জন্মের সময় বা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কে আঘাত পেলে মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার দেখা দিতে পারে।
৪. সংক্রমণ: এনসেফালাইটিস বা মেনিনজাইটিসের মতো মস্তিষ্কের সংক্রমণ এ সমস্যার কারণ হতে পারে।
৫. মেডিকেশন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার দেখা যেতে পারে।
বাচ্চার মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের লক্ষণসমূহ
- অস্বাভাবিক নড়াচড়া বা অনিয়মিত গতিবিধি।
- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কম্পন।
- চলাফেরা করার সময় ভারসাম্যহীনতা।
- হাত বা পায়ের পেশীতে টান ধরা।
- কোনো কাজ করার সময় হাত-পায়ের অতিরিক্ত নড়াচড়া।
বাচ্চার মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা
মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার ধরন এবং তীব্রতার উপর। চিকিৎসার প্রধান ধাপগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. থেরাপি:
- ফিজিক্যাল থেরাপি: বাচ্চার শরীরের পেশীর নিয়ন্ত্রণ এবং চলাচল উন্নত করতে ফিজিক্যাল থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। এটি শরীরের গতিশীলতা বাড়ায় এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- অকুপেশনাল থেরাপি: দৈনন্দিন কার্যক্রম, যেমন খাওয়া, লেখালেখি এবং অন্যান্য কাজ সহজ করতে এই থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
- স্পিচ থেরাপি: কথা বলার সমস্যা থাকলে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
২. ওষুধ:
- পেশীর সংকোচন কমানোর জন্য কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যেমন: বোটুলিনাম টক্সিন (Botox)।
- স্নায়ুর কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু বিশেষ ওষুধ ব্যবহৃত হয়।
৩. সার্জারি:
যদি থেরাপি বা ওষুধে সমস্যার সমাধান না হয়, তবে সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- গভীর মস্তিষ্ক উদ্দীপনা (Deep Brain Stimulation): মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল পাঠানো হয়।
৪. জৈবিক চিকিৎসা:
- সঠিক পুষ্টি এবং খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা।
- যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন।
বাচ্চার সঠিক পরিচর্যার জন্য অভিভাবকদের করণীয়
- শিশুর লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
- চিকিৎসকের পরামর্শমতো থেরাপি এবং ওষুধ চালিয়ে যাওয়া।
- বাচ্চার জন্য একটি সুরক্ষিত এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা।
- শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে স্কুলে শিশুর উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
উপসংহার
বাচ্চার মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার এমন একটি সমস্যা যা সঠিক চিকিৎসা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি, যাতে তারা প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। সঠিক থেরাপি, ওষুধ এবং মানসিক সমর্থনের মাধ্যমে বাচ্চার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব। তাই, কোনো লক্ষণ দেখলেই দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Institute of Neuro Development & Research(INDR) এর দক্ষ এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ সফলতার সাথে অটিজম আক্রান্ত শিশুর সকল সেবা ও থেরাপি করে আসছে। যোগাযোগ : 01931405986 অথবা ভিজিট করুনঃ https://www.autismbd.com