সেরিব্রাল পালসি কি ভালো হয়? জানুন কারণ, চিকিৎসা ও যত্নের উপায়

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) হলো একটি স্থায়ী স্নায়ুজনিত অবস্থা, যা শিশুর শরীরের নড়াচড়া, ভারসাম্য ও পেশি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত জন্মের আগে, সময়ে, বা জন্মের পর অল্প সময়ের মধ্যেই মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণে ঘটে। কিন্তু প্রশ্ন হলো — সেরিব্রাল পালসি কি ভালো হয়?

চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক — সেরিব্রাল পালসি কী, কেন হয়, এবং চিকিৎসার মাধ্যমে কতোটা উন্নতি সম্ভব।

 

সেরিব্রাল পালসি কী?

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) হলো এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়বিক সমস্যা, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে হয়।
এর কারণে শিশুর চলাফেরা, পেশীর নিয়ন্ত্রণ, ভারসাম্য ও শরীরের নড়াচড়া স্বাভাবিক থাকে না।

এটি রোগ নয়, বরং একটি অবস্থা (condition) — অর্থাৎ এটি একবার হলে স্থায়ী থাকে, কিন্তু চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে শিশুর সক্ষমতা অনেক বাড়ানো সম্ভব।

 

সেরিব্রাল পালসির প্রধান কারণসমূহ

সেরিব্রাল পালসি সাধারণত জন্মের আগে, সময় বা পরেই মস্তিষ্কে ক্ষতির কারণে হয়। 

সেরিব্রাল পালসির একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলো —

  1. জন্মের সময় অক্সিজেনের অভাব (Hypoxia)
    শিশুর মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

  2. গর্ভাবস্থায় ইনফেকশন বা জটিলতা
    যেমন – টক্সোপ্লাজমোসিস, রুবেলা, বা ভাইরাল সংক্রমণ।

  3. অপরিণত (প্রিম্যাচিউর) শিশু জন্ম
    ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুদের ঝুঁকি বেশি থাকে।

  4. মস্তিষ্কে আঘাত (Brain Injury)
    জন্মের পর দুর্ঘটনা বা ইনফেকশনের কারণে মস্তিষ্কে ক্ষতি হলে এটি হতে পারে।

  5. জেনেটিক কারণ
    কিছু ক্ষেত্রে জিনগত অস্বাভাবিকতার কারণেও সেরিব্রাল পালসি দেখা দেয়।

সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ

সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ শিশুর বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন হয়। সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো —

  • মাথা ঠিকভাবে না তুলতে পারা

  • বসতে বা হাঁটতে দেরি হওয়া

  • হাত-পা শক্ত বা ঢিলে হয়ে যাওয়া

  • শরীরের একপাশ ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারা

  • কথা বলা বা খাওয়ায় সমস্যা

  • চোখে বা কানেও সমস্যা দেখা দেওয়া

  • খিঁচুনি বা সিজার

সেরিব্রাল পালসি কি ভালো হয়?

সরাসরি বলতে গেলে — সেরিব্রাল পালসি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য নয়, কারণ এটি মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতির ফলাফল। তবে সুখবর হলো, এই অবস্থার উন্নতি সম্ভব
যদি শিশুটি নিয়মিত থেরাপি, চিকিৎসা ও বিশেষ যত্ন পায়, তবে সে স্বাভাবিক জীবনের কাছাকাছি আসতে পারে, স্কুলে যেতে পারে, এমনকি সামাজিকভাবে সক্রিয় জীবনও যাপন করতে পারে।

অর্থাৎ, সেরিব্রাল পালসি ভালো না হলেও, শিশুর দক্ষতা উন্নত করা সম্ভব।

উন্নতির প্রধান উপায়সমূহ

  1. প্রারম্ভিক শনাক্তকরণ (Early Diagnosis):
    শিশুর জন্মের পর থেকেই যদি চলাফেরায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

  2. নিয়মিত থেরাপি:
    ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, ও স্পিচ থেরাপি শিশুর দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক।

  3. পরিবারের সহায়তা:
    পরিবারের ভালোবাসা, ধৈর্য ও মানসিক সহায়তা শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সেরিব্রাল পালসির চিকিৎসা ও থেরাপি

সেরিব্রাল পালসির চিকিৎসা ও থেরাপি

সেরিব্রাল পালসির চিকিৎসা মূলত দীর্ঘমেয়াদী ও বহুমুখী পদ্ধতিতে হয়। এখানে ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট একসাথে কাজ করেন।

১. ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy):

শরীরের নড়াচড়া, ভারসাম্য ও পেশির নমনীয়তা উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অনুশীলন করলে শিশুর হাঁটা, বসা ও দাঁড়ানোর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

২. অকুপেশনাল থেরাপি (Occupational Therapy):

শিশুকে দৈনন্দিন কাজ যেমন খাওয়া, পোশাক পরা, দাঁত ব্রাশ করা, বা খেলাধুলায় অংশ নিতে সক্ষম করে তোলে।

৩. স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি:

যেসব শিশুর কথা বলায় দেরি হয়, তাদের জন্য স্পিচ থেরাপি খুব কার্যকর। এটি তাদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায় এবং আত্মবিশ্বাস জাগায়।

৪. ওষুধ (Medication):

যদি শিশুর খিঁচুনি বা পেশি শক্ত থাকে, তবে ডাক্তার Muscle Relaxant বা Anticonvulsant ওষুধ দিতে পারেন।

৫. সার্জারি (Orthopedic Surgery):

কখনও কখনও হাড় বা জয়েন্ট সোজা করার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে, যাতে শিশুর চলাচল সহজ হয়।

৬. সাইকোলজিকাল সাপোর্ট ও কাউন্সেলিং:

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও মানসিক সাপোর্ট খুব জরুরি। পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর যত্ন কিভাবে করবেন

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর যত্ন কিভাবে করবেন

  • শিশুর প্রতি ধৈর্য ও ভালোবাসা দেখান

  • প্রতিদিন থেরাপির ব্যায়াম করান

  • পুষ্টিকর খাবার দিন

  • নিয়মিত ডাক্তার ও থেরাপিস্টের পরামর্শ নিন

  • অন্য শিশুদের মতো খেলাধুলা ও সামাজিক কাজে যুক্ত রাখুন

ভবিষ্যতে সেরিব্রাল পালসি প্রতিরোধ করা যায় কিভাবে?

যদিও সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ সম্ভব নয়, কিছু সতর্কতা মেনে চললে ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায় —

  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

  • ইনফেকশন বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • শিশুর জন্ম নিরাপদভাবে করানো

  • জন্মের পর মাথায় আঘাত এড়ানো

  • নবজাতকের যত্নে সঠিক টিকা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা

 

উপসংহার

সেরিব্রাল পালসি পুরোপুরি ভালো হয় না, তবে চিকিৎসা, থেরাপি ও যত্নের মাধ্যমে শিশুর জীবনে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে শিশুটি নিজেই অনেক কাজ শিখতে পারে, স্কুলে যেতে পারে এবং সামাজিকভাবে সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারে।

তাই যদি আপনার শিশুর মধ্যে সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ দেখা যায়, দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন — কারণ প্রাথমিক পদক্ষেপই ভবিষ্যতের উন্নতির মূল চাবিকাঠি।

Institute of Neuro Development & Research(INDR) এর দক্ষ এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ সফলতার সাথে সেরিব্রাল পালসি ও অটিজম আক্রান্ত শিশুর সকল সেবা ও থেরাপি করে আসছে।  যোগাযোগ : 01931405986 অথবা ভিজিট করুনঃ https://www.autismbd.com

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top