লিসেনিং থেরাপি: অটিজম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের উন্নয়নে কার্যকর সমাধান

বর্তমান যুগে শিশুদের মানসিক, আচরণগত এবং শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো লিসেনিং থেরাপি। এটি একটি বৈজ্ঞানিক ও প্রমাণভিত্তিক থেরাপিউটিক পদ্ধতি যেখানে সংগীত ও শব্দ ব্যবহার করে মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করা হয়। বিশেষ করে অটিজম, ADHD, স্পিচ ডিলে, সেন্সরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার এবং লার্নিং ডিজঅর্ডার থাকা শিশুদের উন্নয়নে লিসেনিং থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানবো লিসেনিং থেরাপি কী, কিভাবে কাজ করে, কারা উপকৃত হয় এবং এর সুবিধা

 

লিসেনিং থেরাপি কী?

লিসেনিং থেরাপি হলো এমন একটি থেরাপি যেখানে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ককে নির্দিষ্ট অডিও প্রোগ্রাম, সংগীত বা শব্দ শোনানো হয়। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় হয়, যা মনোযোগ, ভাষা, শেখার দক্ষতা এবং সামাজিক আচরণ উন্নত করে। এই থেরাপি মূলত শ্রবণ স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের মধ্যে নতুন সংযোগ তৈরি করতে সহায়তা করে।

 

লিসেনিং থেরাপি কীভাবে কাজ করে?

লিসেনিং থেরাপির কাজ করার পদ্ধতি সহজ হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকর:

  1. অডিও ইনপুট – শিশুকে বিশেষভাবে ডিজাইন করা সংগীত বা শব্দ শোনানো হয়।

  2. মস্তিষ্কে উদ্দীপনা – এই শব্দ মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্রকে সক্রিয় করে।

  3. নিউরাল কানেকশন তৈরি – পুনরাবৃত্ত অডিওর মাধ্যমে স্নায়ুর মধ্যে নতুন সংযোগ তৈরি হয়।

  4. আচরণগত পরিবর্তন – মনোযোগ বৃদ্ধি, ভাষা শেখা, এবং সামাজিক আচরণে উন্নতি আসে।

 

কারা লিসেনিং থেরাপি গ্রহণ করতে পারে?

লিসেনিং থেরাপি মূলত সেই শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপযোগী যাদের:

কারা লিসেনিং থেরাপি গ্রহণ করতে পারে

 

লিসেনিং থেরাপির উপকারিতা

লিসেনিং থেরাপি অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:

মনোযোগ বৃদ্ধি – ADHD বা মনোযোগের সমস্যা থাকা শিশুদের জন্য কার্যকর।
ভাষা উন্নয়ন – শব্দ বোঝা ও স্পিচ ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করে।
আচরণ নিয়ন্ত্রণ – হাইপারঅ্যাক্টিভ বা আবেগপ্রবণ শিশুদের আচরণ স্বাভাবিক হয়।
শিক্ষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি – শেখার ক্ষমতা, পড়াশোনা ও স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।
সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি – অন্যদের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে।

 

লিসেনিং থেরাপির ধরণ

লিসেনিং থেরাপির ধরণ

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরণের লিসেনিং থেরাপি প্রচলিত আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  1. Tomatis Method – এটি ফ্রান্সে আবিষ্কৃত একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি, যা সংগীত ও কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে।

  2. Auditory Integration Therapy (AIT) – মূলত অটিজম ও সেন্সরি সমস্যা থাকা শিশুদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

  3. Integrated Listening System (iLs) – সংগীত, শব্দ ও মুভমেন্ট একত্রে ব্যবহার করে শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

 

বাংলাদেশে লিসেনিং থেরাপি

বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন বিশেষায়িত থেরাপি সেন্টার ও শিশু উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে লিসেনিং থেরাপি প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে অটিজম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের উন্নয়নে এ থেরাপি অভিভাবকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

 

লিসেনিং থেরাপি দেওয়ার সময় যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে

  • প্রশিক্ষিত অকুপেশনাল থেরাপিস্ট বা স্পিচ থেরাপিস্ট এর তত্ত্বাবধানে করতে হবে।

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে করতে হবে।

  • শিশুর বয়স ও সমস্যার ধরন অনুযায়ী থেরাপি কাস্টমাইজ করতে হবে।

  • অভিভাবকের ধৈর্য ও সহযোগিতা জরুরি।

 

লিসেনিং থেরাপি কতদিন চালিয়ে যেতে হয়?

এটি শিশুর অবস্থা ও প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত থেরাপি চালিয়ে যেতে হয়। নিয়মিত থেরাপি নিলে শিশুর উন্নতি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

 

অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ

  1. শিশুর অগ্রগতি নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে ধৈর্য ধরে থেরাপি চালিয়ে যান।

  2. বাড়িতে থেরাপিস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুশীলন করান।

  3. শিশুর উন্নয়ন পর্যায়ক্রমে নোট করুন এবং থেরাপিস্টকে জানান।

  4. ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে শিশুটি অনুপ্রাণিত হয়।

 

উপসংহার

লিসেনিং থেরাপি একটি কার্যকরী ও বৈজ্ঞানিক থেরাপি, যা অটিজম, ADHD, স্পিচ সমস্যা এবং লার্নিং ডিজঅর্ডার থাকা শিশুদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে এবং অনেক পরিবার ইতিমধ্যে ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছে। শিশুর ভবিষ্যৎ গড়তে চাইলে লিসেনিং থেরাপি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

 

Institute of Neuro Development & Research(INDR) এর দক্ষ এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ সফলতার সাথে অটিজম আক্রান্ত শিশুর সকল সেবা ও লিসেনিং থেরাপি  করে আসছে।  যোগাযোগ : 01931405986 অথবা ভিজিট করুনঃ https://www.autismbd.com

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top