অটিজম ব্যাবস্থাপনায় স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি

নাদিফ, আতিফ, বিভা ওরা তিন ভাইবোন। আতিফের বয়স ৭, বিভার ৫, ভাইবোনদের মাঝে নাদিফ সবার ছোট, ওর এখন তিন চলছে, নাদিফের বাবা মা খেয়াল করলেন যে নাদিফ কখনই তার বড় ভাই বোনদের সাথে খেলেনা, কোন কথা বলেনা, সে মুখে এমন কিছু অদ্ভুত শব্দ করে যা নিতান্তই অর্থহীন। ওকে ডাকলে মনে হয় শুনতে পাচ্ছেনা। কোন কারণ ছাড়াই অন্যদের আক্রমন ও আহত করে। মাঝেমধ্যে জিদ উঠলে নিজের মাথাটা সজোরে দেয়ালের সাথে ঠুকিয়ে আঘাত করতে চায়। ওর নানী বলেছিলেন আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, বরং ইদানিং দেখা যাচ্ছে যখন সে খুব আনন্দিত হয় যেমন টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন শুনে হঠাৎ পাখির ডানার মত করে হাত ঝাপটায় বা দোলায় এমনি আরও অনেক অদ্ভুত দেহভঙ্গি করে, ওকে নিয়ে কি করবে, কোথায় যাবে, কিছুই ভেবে পায়না ওর বাবা মা, নাদিফের বাবা-মা চলে এলেন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে, অতঃপর শিশু বিশেষজ্ঞ যা বললেন তা রীতিমত চলকে দিল তাদের।

নাদিফ অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত। এই রোগের নাম আগে অল্পবিস্তর শুনলেও নাদিফের বাবা-মা জানেননা যে নাদিফের ভাষাবিকাশের েেত্র আদৌ কোন চিকিৎসাব্যবস্থা আমাদের দেশে আছে কিনা, নাদিফের মত এমন হাজার আটস্টিক শিশুর ভাষাবিকাশে বিজ্ঞানসম্মত একটি চিকিৎসাব্যবস্থার নাম স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি।
Autism শব্দটি আসলে এসেছে দুটো গ্রীক শব্দ “AUT” অর্থ্যাৎ আত্ম বা নিজ এবং “ism” অর্থ্যাৎ মগ্ন থাকা থেকে। শাব্দিক অর্থে অটিস্টিক শিশু বলতে আমরা বুঝি যেই শিশুটি অস্বাভাকিভাবে আত্ম মগ্ন থাকে।

অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির ভাষাবিকাশের সমস্যাসমূহঃ

  • পর্যাপ্ত দৃষ্টি সংযোগ ও মনযোগের অভাব।
  • কথা বলার মাধ্যামে যোগাযোগে অদতা।
  • সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অপরিপক্কতা।
  • কথা বলতে না পারার কারণে সামান্য কিছু ইশারা বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভাবের আদান-প্রদান করা।
  • মাঝে মাঝে ১টি বা ২টি শব্দ বললেও ২বা ৩ শব্দবিশিষ্ট বাক্য ব্যবহারে অপারগতা।
  • বাক্য ব্যবহার করলেও গুছিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারা।
  • কাউকে কোন প্রশ্ন করতে না পারা বা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা।
  • পরিবেশ, সময় এবং ব্যাক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে যোগাযোগে খাপ খেতে পারার অভাব।
  • একই শব্দ, বাক্য এমনকি কোন প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করা
  • একটি সহজ নির্দেশ পালনে করতে না পারা।
  • কোন একটি নির্দিষ্ট ঘটনা, কাহিনী, গল্প বা কথোপকথনকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারা ইত্যাদি।

একজন স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট যা করেনঃ

  • অটিজম রোগের ধরণ ও মাত্রা সনাক্ত করেন
  • শিশুকে সহজ ভাবে শিখতে, বুঝতে অথবা মনের ভাব প্রকাশে সাহায্য করা। প্রয়োজন বোধে ইশারা ভাষা কিংবা ধাপ অনুযায়ী PECS (ছবি বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগ কৌশল) প্রয়োগ করা।
  • শিশুর পছন্দগুলোকে কিভাবে প্রাধাণ্য দিতে হবে এবং অস্বাভাবিক আচরনকে খেলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা।
  • চারপাশের পরিবেশ থেকে নতুন শব্দ, নতুন দতা এবং সর্বোপরি যোগাযোগের সুযোগ করে দেয়া।
  • বিভিন্ন সামাজিক দতা (সালাম, হ্যান্ডশেক, টাটা) এবং চারপাশের মানুষের সাথে সামাজিক আচরনকে সুগঠিত করা।

একজন স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট শিশুর ভাষাগত সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্নয় করেন। তারপর ১-১, ১-২ অথবা গ্র“পে স্পিচ থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুকে ভাষাবিকাশে সহায়তা করেন। এেেত্র শিশুর অভিভাবক ও শিককেও স্পিচ থেরাপির কৌশলগত প্রয়োগের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরিশেষে বলা যায় একজন স্পিচ থেরাপিস্টের পরামর্শে আপনি হয়ত খুঁজে পেতে পারেন যোগাযোগের সহজতম মাধ্যম যা এ মূহুর্তেই আপনার শিশুর জন্য সবচেয়ে জরুরী।