অটিজম ও হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার এর বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসায় বিভিন্ন ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট (সম্পুরক খাদ্য) খুবি গুরুত্তপুর্ন ভুমিকা পালন করে। আজকে আমরা সংক্ষেপে অটিজম ও হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার এর জন্য যেসব ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট ব্যাবহার করা হয় তা নিয়ে আলোচনা করব।
বেশিরভাগ অটিস্টিক ও এডিএইচডি এর বাচ্চার মধ্যেই বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এর ঘাটতি দেখা যায়। সাম্প্রতিক বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসায় তাই ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট এর বিপুল ব্যাবহার হয়ে আসছে।
ডায়েটঃ ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের বাচ্চার প্রাত্তাহিক খাবার এর ধরণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যেমন, যে সব খাবারে গ্লুটিন ও কেসিন থাকে, সেগুল বাচ্চার মস্তিস্কে আসক্তি তৈরি করতে পারে এবং হাইপার একটিভিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে আশার কথা হল, আমাদের দেশে যে ধরনের খাদ্য আমরা খাই, যেমন ভাত, ডাল ইত্যাদিতে গ্লুটিন নেই। কিন্তু, আটার মধ্যে গ্লুটিন অনেক পরিমানে থাকে। তাই আটার তৈরি যে কোন খাবার বাচ্চাকে দেয়া যাবে না। এমন কি দোকানে যে সব চিপস, চকলেট, প্রক্রিয়া জাত খাবার পাওয়া যায় তার সব গুলোর মধ্যেই গ্লুটিন রয়েছে। এমনকি চিকেন ফ্রাই তে ও আটা ব্যাবহার করা হয়। তাই এ সব খাবার বাচ্চাকে একদম বন্ধ রাখতে হবে। গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, গ্লুটিন এমনি একটি উপাদান যা বিশেষ শিশুদের মস্তিস্কের অপোয়েড রিসিপ্টর এর সাথে যুক্ত হয়ে হেরোইন/মরফিন এর মতই নেশার উদ্রেক ঘটাতে পারে।
তেমনি, সকল ডেইরি প্রোডাক্ট (দুঘদ জাতীয় খাবার) এ কেসিন নামক উপাদান থাকে, যা বিশেষ শিশু দের পরিপাক তন্ত্র পরিপাক করতে পারে না এবং হাইপার একটিভিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সকল প্রকার দুধ ও ডেইরি প্রোডাক্ট বন্ধ করে দেখা যেতে পারে যে বাচ্চার আচরনে কোন পরিবর্তন হয় কি না। যদি হাইপার একটিভিটি কমে আসে, তাহলে দুধের বিকল্প খাবার এ বাচ্চাকে অভ্যস্ত করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম খাইয়ে বাচ্চার ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।
ঘুমঃ ঘুম আমাদের জীবনের খুবি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু দেখা যায় অনেক বিশেষ শিশুরই ঘুমের সমস্যা রয়েছে এবং ঘুমের তারতম্মের জন্য তাদের মধ্যে আচরণের সমস্যা দেখা দেয় যেমন হাইপার একটিভিটি। প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের শরীরে মেলাটোনিন নামে একটি উপাদান তৈরি হয় যার কারনে আমাদের ঘুম আসে। অনেক বিশেষ শিশু যে এই মেলাটোনিন ট্যাবলেট আকারে খাইয়ে তাদের ঘুমের উপকার পাওয়া গ্যাছে। মেলাটোনিন যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের দেহে উৎপাদিত হবার কথা, তাই এই মেলাটোনিন বাহির থেকে দীর্ঘদিন খাওয়ালেও বাচ্চার কোন সমস্যা হবার কথা নয়, এবং এটা তার জন্য নিরাপদ। তাই বিশেষ শিশুদের বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসায় অভিজ্ঞ কারো তত্ত্বাবধানে এই চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে।
এবার আসাযাক মুল আলোচনায়। বাচ্চার জন্য কি কি ধরনের ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট ব্যাবহার করা যায় এবং তাতে কি কি উপকার হতে পারে।
মাল্টি ভিটামিনঃ জেনারেল মাল্টি ভিটামিন এর মাঝারি ডোজ ব্যাবহার করে বাচ্চার ঘুম এবং অন্ত্রের সমস্যার ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
ভিটামিন সিঃ গবেষণায় দেখা গ্যাছে নির্দিষ্ট ডোজের ভিটামিন সি ব্যাবহার করে অটিস্টিক বাচ্চার বার বার বিশেষ ধরনের অঙ্গ সঞ্চালন এর অভ্যাস এর উন্নতি ঘটেছে।
জিংকঃ অটিজম ও হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার এর বাচ্চাদের মধ্যে জিংক এর ঘাটতি দেখা যায়। জিংক এর ঘাটতির কারনে অনেক সময় বাচ্চাদের মনোযোগের অভাব দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গ্যাছে, নির্দিষ্ট মাত্রায় জিংক বাচ্চাকে দেয়ার ফলে তাদের মনোযোগের বিশেষ উন্নতি ঘটে।
ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি-৬ এর কম্বিনেশন ব্যাবহার করার ফলে অটিস্টিক বাচ্চাদের আচরণ, সামাজিক যোগাযোগ, মেলামেশা, ভাব বিনিময় করা ইত্যাদি তে উন্নতি দেখা যেতে পারে বলে গবেষণায় প্রমান পাওয়া যায়।
পিকনজেনলঃ পিকনজেনল শরীরে গ্লুটাথায়োন এর পরিমাণ বাড়ায় যা বাচ্চার শরীর থেকে টক্সিক মেটাল বের করে দেয়। অধিকাংশ অটিস্টিক ও হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার এর বাচ্চার শরীরেই এই গ্লুটাথায়োন এর পরিমাণ কম থাকে। পিকনজেনল আরও যে কাজ গুলো করে তা হল, শরীরে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, বাচ্চার মনোযোগ কোঅর্ডিনেসন বাড়ায় এবং হাইপার একটিভিটি কমায়।
কারনসাইনঃ এই সাপ্লিমেন্ট এর জোরাল এন্টি অক্সিডেন্ট ক্ষমতা সেই সাথে খিঁচুনি কমানোর ও সক্ষমতা রয়েছে। কথা বলার সক্ষমতা ও সামাজিক যোগাযোগ ও বাড়াতে পারে কারনসাইন।
ওমেগা – ৩ ফ্যাটি এসিডঃ এই উপাদানের অভাবে হাইপার এক্টিভিটি, অন্যের সাথে ভাব বিনিময় এর সমস্যা, দুশ্চিন্তা, হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে হাত পা ছুড়া ইত্যাদি বেশি হতে পারে। মায়ের দুধের মাধ্যমে বা অন্যান্য শিশু খাদ্দের মাধ্যমে ওমেগা – ৩ ফ্যাটি এসিড এর অভাব পূরণ না হলে সেই বাচ্চার অটিজম এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ২-৪ গুন বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে ওমেগা – ৩ ফ্যাটি এসিড সম্পুরক খাদ্য হিসাবে দেয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন বিকাশ গত সমস্যা, হাইপার একটিভ ডিজঅর্ডার, অটিজম ইত্যাদির উন্নতি ঘটতে পারে।
উপরে যে সব ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট এর কথা বলা হল, তা অনেক কেই উপকার দেবে। তবে মনে রাখতে হবে, এই সকল সম্পুরক খাদ্দের মাধ্যমে যে উন্নতি হবার সম্ভাবনা থাকে তা ১-২ দিনেই চোখে পড়বে না। অনেক সময় দৃশ্যমান উন্নতি পরিলক্ষিত হতে ২-৩ মাস সময় লাগে। আবার সব ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট ই একসাথে শুরু করা যায় না। শরীরে কোন কোন উপাদান এর ঘাটতি আছে, কোন টি বেশি আছে তা নিরুপনের জন্য অনেক সময় ডায়াগনস্টিক টেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে। তাই এই ধরনের বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসা শুরু করার আগে বায়োমেডিক্যাল চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছেন এমন কারো পরামর্শ নিয়ে করাই ভাল।
—
অগাস্ট ২০১৩, ওসমান, পোষ্ট গ্রাড, নিউরো রিহ্যাব (ইউ কে), প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরো-ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ট্রাস্ট। ০১৯৩১৪০৫৯৮৬
Ami ki kore bujhbo amar baby thik kon element er deficiency te vugche?