ফাতেমার অটিজম এখন অতীত

তিন বছরের ফাতেমাকে (ছদ্ম নাম) এখন তার সমবয়সী অন্য বাচ্চাদের থেকে আলাদা করা খুব কঠিন। কিন্তু ছয় মাস পূর্বেও ফাতেমার মা বাবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে খুবই আশাহত হয়ে ছিল যে, তাদের মেয়ের অটিজমের লক্ষণ রয়েছে। তারপর কিছু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতে ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে ফাতেমার মা বাবা ইনষ্টিটিউট অব নিউরোডেভেলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ (আই এন ডি আর) এর সন্ধান পায়। গত ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ সালে ফাতেমা  আই এন ডি আর এ ভর্তি হয়। প্রাথমিক ভাবে আই এন ডি আর এর বিশেষজ্ঞ টিম ফাতেমাকে পর্যালোচনা করে দেখেন যে তার কগনেটিভ স্কিল, পারসনাল কেয়ার স্কিল, প্রি-ভারবাল স্কিল তার সম বয়সী অন্য শিশুদের তুলনায় খুবই কম। এক কথায় তার ডেভেলপমেন্টাল ডিলে রয়েছে। সেন্সরি প্রসেসিং ডিস-অর্ডার পর্যালোচনা করে দেখা গেল যে ফাতেমার স্কোর ১০৮ এর মধ্যে ১০০ আর অটিজম ট্রিটমেন্ট ইভালুয়েশান চেকলিস্ট এ স্কোর হচ্ছে ১৭৯ এর মধ্যে ১০২।আই এন ডি আর এর বিশেষজ্ঞ টিম সনাক্ত করলেন যে ফাতেমার সেন্সরি প্রসেসিং সিস্টেম ঠিক মত কাজ করছে না। ফলশ্রুতিতে তার মানসিক, সামাজিক বিকাশ দেরিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ টিম সিদ্ধান্ত নিলেন যে ফাতেমার বিশেষ ধরনের ‘সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি’ ও সেই সাথে উচ্চ প্রযুক্তির ‘নিউরো ফিডব্যাক ব্রেইন ট্রেইনিং’ ও ‘নিউরো মডিউলেশন’ থেরাপির প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য যে এই সকল উচ্চ প্রযুক্তির সেবা বাংলাদেশে কেবল মাত্র আই এন ডি আর এই পাওয়া যায়। দীর্ঘ ছয় মাস বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে, সমন্বিত চিকিৎসার মাধ্যমে ফাতেমার আশাতীত সাফল্য পরিলক্ষিত হয়েছে। পোষ্ট ট্রিটমেন্ট ইভালুয়েশান থেকে দেখা যায় যে ফাতেমা এখন তার নাম বলতে পারে, তাকে নির্দেশনা দিলে তা সে অনুসরণ করে ও এক থেকে ১০ পর্যন্ত গুণতেও পারে যা সে পূর্বে একদমই পারত না। তার পারসনাল স্কিল স্কোর ২ থেক বেড়ে ১৮ হয়েছে, প্রি-ভার্বাল স্কিল ২ থেকিএ ১৪ হয়েছে। সেন্সরি প্রসেসিং ডিস-অর্ডার স্কোর ১০০ থেকে নেমে ৬৪ তে এসেছে।  অটিজম ট্রিটমেন্ট ইভালুয়েশান চেকলিস্ট এ স্কোর ১০২ থেকে ৩৮ এ নেমে এসেছে (৬২% স্কোর উন্নতি)। ফাতেমার এই উন্নতি দেখে তার মা বাবা খুব ই খুশি ও আবেগে আপ্লুত। ফাতেমা এখন তার সম বয়সী অন্য শিশুদের সাথে থাকলে, তাকে সাধারণত বোঝা খুব কষ্টকর যে তার অটিজমের লক্ষণ ছিল। এই ব্যপারে  আই এন ডি আর এর সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ বলেনঃ যে সকল বাচ্চাদের ডেভেলপমেণ্টাল ডিলে রয়েছে, তা বেশিরভাগ সময় সেন্সরি প্রসেসিং ডিস-অর্ডারের কারনে হয়ে থাকে। যত দ্রুত সেন্সরি ডিস-অর্ডার গুলো সনাক্ত করা যায় এবং সেই অনুযায়ী ‘সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি’ শুরু করা যায় ততই বাচ্চার জন্য মঙ্গল; আর উচ্চ প্রযুক্তির ‘নিউরো ফিডব্যাক ব্রেইন ট্রেইনিং’ ও ‘নিউরো মডিউলেশন’ থেরাপি বাচ্চার সেন্সরি প্রসেসিং কে আরও ত্বরান্বিত করে থাকে।