আমাদের দেশে অটিজম এর চিকিৎসায় ‘বায়ো মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট’ একটি নতুন নাম হলেও আধুনিক বিশ্বে বহুল প্রচলিত একটি ব্যবস্থা। এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রথাগত থেরাপি (অকুপেশনাল, স্পীচ, সাইকো থেরাপি ইত্যাদি) এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিতে পারে বহু গুনে।
আজ আমরা যে সকল বায়ো মেডিক্যাল চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করব সেগুল অটিজম রিসার্চ ইন্সিটিউট কতৃক ২৩,০০০ অটিস্টিক বাচ্চার উপর পরিচালিত একটি সার্ভে এর উপর ভিত্তি করে লিখিত।
বায়ো মেডিক্যাল চিকিৎসা সমূহের মধ্যে প্রধান প্রধান গুল তুলে ধরা হলঃ
- ডায়েট ইম্প্রভমেন্টঃ প্রত্যেক মানব দেহই ঠিক ভাবে চলার জন্য কিছু অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি প্রয়োজন হয়। যেমন ভিটামিন, মিনারেল, অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, এমাইনো অ্যাসিড, ইত্যাদি। অটিস্টিক বাচ্চাদের খাদ্য অভ্যাস অনেক ক্ষেত্রেই এই উপাদান গুলো সর্বরাহ করতে পারে না। তাই বাচ্চার এই ধরনের কোন অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান এর ঘাটতি আছে কিনা তা যাচাই করে দেখে একটি সমন্বিত ডায়েট প্লান তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি ট্যাবলেট বা অন্যান্য ফর্ম এ দিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে ৪৮% থেকে ৫৩% অটিস্টিক বাচ্চা কেবল ভাল ও সমন্বিত ডায়েট প্লান ফলো করে তাদের অটিস্টিক সিম্পটম কমাতে সক্ষম হয়েছে।
- খাদ্যে এলারজিঃ অনেক অটিস্টিক বাচ্চার খাদ্যে এলারজি থাকে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে অন্ত্রে এবং/অথবা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সমস্যা থাকা। এই সব ক্ষেত্রে অর্ধ পরিপাক কৃত খাবার শরীরে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই ধরনের অটিস্টিক বাচ্চার ইমিউনো গ্লবিউলিন ই অথবা জি পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ৬১% অটিস্টিক বাচ্চা খাদ্যের এলারজি চিকিৎসায় উন্নতি লাভ করেছে।
- গ্লুটিন ফ্রী/কেসিন ফ্রী ডায়েটঃ গ্লুটিন ও কেসিন থেকে প্রাপ্ত কিছু পেপটাইড অটিস্টিক বাচ্চাদের মস্তিস্কের অপয়েড রিসিপ্টরের সাথে বাইন্ড করে আচরণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা হেরোইন অথবা মরফিন এর মতই সক্ষম। এমনকি এটা নেশার উদ্রেক ও করতে পারে, যার ফলে গ্লুটিন ও কেসিন যুক্ত খাবার ছেড়ে দেয়ার পরেও আসক্তির কারনে কিছু দিন বাচ্চার আচরনে উগ্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাচ্চাকে গ্লুটিন ও কেসিন মুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। সেই সাথে গ্লুটিন ও কেসিন যুক্ত খাবারে যে ভাল উপাদান গুল রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম, তা অন্যান্য খাবারের মাধ্যমে বা ট্যাবলেট এর মাধ্যমে বাচ্চাকে দিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে ৬৫% অটিস্টিক বাচ্চা গ্লুটিন ও কেসিন মুক্ত খাবার খেয়ে উন্নতি লাভ করেছে।
- ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্টঃ অটিস্টিক বাচ্চাদের খাদ্যাভ্যাস এর কারনে অনেক সময়ই দেখাজায় তাদের বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাব রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে সুধুমাত্র ভিটামিন বি ৬ ও বি ১২ খাওয়ানোর মাধ্যমে ৫১% থেকে ৬৩% বাচ্চার অটিজম সিম্পটম এর উন্নতি হয়েছে। তবে বাচ্চার কি ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাব রয়েছে তা পূর্বে জেনে নিতে হবে।
- উচ্চ মাত্রার ভিটামিন বি ৬ ও ম্যাগনেসিয়ামঃ ২০ টির ও বেশি উন্নত গবেষণায় দেখা গেছে ৪০-৫০% অটিস্টিক বাচ্চা উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন বি ৬ ও ম্যাগনেসিয়াম গ্রহন করার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে।
- অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিডঃ বাচ্চাদের মস্তিস্কের ২০% ই অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন ওমেগা-৩) দ্বারা তৈরি। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে অটিস্টিক বাচ্চাদের শরীরে এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর ঘাটতি রয়েছে। তাই অটিস্টিক বাচ্চার রক্তে ফ্যাটি অ্যাসিড এর ঘাটতি আছে কিনা তা জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী খাবার খেলে বা ঔষধের মাধ্যমে পূরণ করলে বাচ্চা উপকৃত হতে পারে। গবেষণায় ৫৫% বাচ্চার এই ধরণের উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে।
- ডাইজেস্টিভ এঞ্জাইম আমাদের শরীরের ভেতরে জটিল খাদ্যকে ভঙ্গে সরল খাদ্যে পরিণত করে যাতে আমাদের শরীর এ তা প্রবেশ করে। কিন্তু অনেক অটিস্টিক বাচ্চার ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই ধরণের ডাইজেস্টিভ এঞ্জাইম গুল কাজ করে না। যার ফলে তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি কম পরিমানে ঢুঁকে। বাচ্চার পায়খানা পরিক্ষা করে কোন ধরণের খাবার সে পরিপাক করতে পারছে না তা জেনে নিয়ে সেই ধরণের এঞ্জাইম খাবারের সাথে দিলে সমস্যা কমে আসতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ৫৬% বাচ্চা ডাইজেস্টিভ এঞ্জাইম ব্যাবহার করে উপকৃত হয়েছে।
- মেলাটোনিনঃ অটিস্টিক বাচ্চাদের অনেকেরই ঘুমের সমস্যা রয়েছে। যেমন অনেকে বেশি ঘুমায় বা ঝিমুনি আসে, অনেকে রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটে, অথবা কম ঘুমায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্ত্রের সমস্যার জন্য এমন টা হয়। অন্ত্রের প্রদাহ কমে গেলে আবার ঠিক হয়ে যায়। তবে যাদের অনেক দিন ধরে ঘুমের সমস্যা থাকে তাদের মেলাটোনিন ব্যাবহার করে দেখা যায়। ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত ৬১% বাচ্চা মেলাটোনিন চিকিৎসায় উন্নতি করেছে।
- গ্লুটাথায়ন থেরাপিঃ অনেক অটিস্টিক বাচ্চাদের শরীরে একটিভ গ্লুটাথায়ন এর অভাব থাকে। গ্লুটাথায়ন শরীর থেকে টক্সিক কেমিক্যাল, মেটাল ইত্যাদি (যা আমরা খাবারের সাথে গ্রহন করি বা শরীরের উৎপাদন হয়) বের করে দিতে সহায়তা করে। যাদের এটা রক্তে কম থাকে, তাদের বিভিন্ন উপায়ে যেমন মুখে খাবার ঔষধ, ইনজেকশন ইত্যাদির মাধ্যমে বাহির থেকে দেয়া যেতে পারে। মুত্রের পোরফাইরিন টেস্ট এর মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে মার্কারি, লেড ইত্যাদি টক্সিন ও মেটাল এর উপস্থিতি ও মাত্রা জেনে নিয়ে চিলেসন থেরাপির মাধ্যমে এই সমস্যায় আক্রান্ত বাচ্চার চিকিৎসা করা সম্ভব। গবেষণায় ৭৬% বাচ্চা এই ধরণের চিকিৎসায় উন্নতি করেছে।
উপরে উল্লেখিত চিকিৎসা গুল ছাড়াও আরও কিছু বায়ো মেডিক্যাল চিকিৎসা রয়েছে। বলে রাখা ভাল, বায়ো মেডিক্যাল চিকিৎসা যে সব অটিস্টিক বাচ্চার ক্ষেত্রেই কাজে দিবে টা নয়। তবে যাদের ক্ষেত্রে কাজে দেয়, তাদের প্রভূত উন্নতি হয় বলে প্রমান পাওয়া যায়। এই ধরণের চিকিৎসা অন্যান্য থেরাপি যেমন অকুপেশনাল থেরাপি, স্পীচ থেরাপি, সাইকো থেরাপি ইত্যাদির কার্যকারিতা ও বাড়িয়ে দিতে পারে বহু গুনে।
যারা এই বায়ো মেডিক্যাল চিকিৎসা সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাদের জন্য অটিজম বিডি একটি ২-৩ ঘণ্টার ফ্রী ওয়ার্কশপ আয়োজনের আশা রাখে। অটিস্টিক বাচ্চাদের বাবা মা, চিকিৎসক, স্কুল শিক্ষক সহ আগ্রহী সকলে এই প্রোগ্রাম এ অংশ গ্রহন করতে পারবেন। আপনি আগ্রহী হলে আমাদের এস এম এস এর মাধ্যমে (01931405986) আপনার আগ্রহের কথা জানাতে পারেন।
ধন্যবাদ
—
মে, ১৬, ২০১৪, ওসমান, পোষ্ট গ্রাড, নিউরো রিহ্যাব (ইউ কে), প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরো-ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ট্রাস্ট। ০১৯৩১৪০৫৯৮৬
Thank you very much!
Can I have more informations about autistic children, please? ( In Bangladesh)
What type of info. you need? Please let us know if you need further help. You can call us at 01931405986 any time.
Email address, Please.
I would like to take biomedical treatment for my child.
So I need your suggestion.
Please call Dr. Osman @ 01931405986